কলম্বিয়ায় পুলিশের একটি হেলিকপ্টার ও বিমানঘাঁটির কাছে ঘটে যাওয়া দুটি পৃথক বিস্ফোরণে অন্তত ১৮ জন নিহত এবং আরও ৬০ জন আহত হয়েছে। ধারাবাহিক এই হামলাগুলো দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সংঘটিত ঘটনাগুলোকে কলম্বিয়ার কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে উভয় হামলার মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে কি না, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি।
বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যান্টিওকিয়া প্রদেশে মাদকদ্রব্য ধ্বংসের কাজে সহায়তা করছিল জাতীয় পুলিশের একটি হেলিকপ্টার। সে সময় ড্রোন হামলার শিকার হয় এটি। একটি ভিডিওতে দেখা যায় হেলিকপ্টারটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হচ্ছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন।
কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেদ্রো আর্নুলফো সানচেজ জানিয়েছেন, হামলাটি করেছে সাবেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফার্ক (এফএআরসি) থেকে বেরিয়ে আসা ‘ইসটাডো মেয়র সেন্ট্রাল (ইএমসি)’- এর ৩৬তম ফ্রন্ট।
প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো জানান, প্রথমে তিনি ধারণা করেছিলেন যে শক্তিশালী অপরাধী সংগঠন ‘গালফ ক্ল্যান’ হয়তো জড়িত থাকতে পারে। কারণ সম্প্রতি উরাবা অঞ্চলে ১.৫ টন কোকেন জব্দ করা হয়েছে। তবে পরে তিনি দায় চাপান ফার্ক বিদ্রোহীদের এই অংশের ওপর।
জাতীয় পুলিশের পরিচালক কার্লোস ফের্নান্দো ত্রিয়ানা বেলত্রান ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়েছেন। হামলায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
একই দিনে কালি শহরের মার্কো ফিদেল সুয়ারেজ সামরিক বিমানঘাঁটির কাছে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যমতে, সেখানে অন্তত ছয়জন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়েছেন।
কলম্বিয়ার বিমানবাহিনী একে সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করে জানিয়েছে, হামলাটি গাড়িবোমার মাধ্যমে চালানো হয়েছে।
কালি শহরের মেয়র অফিস জানিয়েছে, শহরের প্রবেশ ও প্রস্থান পথগুলোতে এখন কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জরুরি সেবা কর্মীরা আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। হামলার সঙ্গে জড়িতদের তথ্য দিলে প্রায় এক লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের দায় কেউ স্বীকার করেনি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুনে কালি ও কউকা অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে একাধিক হামলায় অন্তত সাতজন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়েছিলেন। সে সময় প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছিল, ২০২২ সালে স্থানীয় এক ফার্ক বিদ্রোহী নেতার মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসেবে এসব হামলা চালানো হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ড্রোন হামলাও সাধারণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে, দেশে ১১৫টি এ ধরনের হামলা রেকর্ড করা হয়েছিল, যার বেশিরভাগই অবৈধ সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।
বর্তমানে বিলুপ্ত রেভোলিউশনারি আর্মড ফোর্সেস অফ কলম্বিয়া (FARC) গ্রুপের বিভিন্ন ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠীর ওপর এই হামলাগুলি, আসছে নির্বাচনের আগে কলম্বিয়ার ভঙ্গুর শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।