ব্রাজিল ফুটবলের আধুনিক সময়ের প্রতীক নেইমার জুনিয়র। জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক তিনি, বারবার ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। তবুও বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেছে এই সুপারস্টারের।
৩৩ বছর বয়সে এসে নেইমার যেন শেষ চেষ্টাটাই করতে চান ২০২৬ বিশ্বকাপে, যেটি আয়োজিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয়। তবে বড় প্রশ্ন হলো—সেই বিশ্বকাপে কি নেইমারকে দেখা যাবে ব্রাজিলের জার্সিতে? নাকি কোচ কার্লো আনচেলত্তি সাজাবেন একদম নতুন স্কোয়াড, যেখানে নেইমার থাকবেন শুধুই অতীতের এক নাম?
গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক ইনজুরিতে পড়েছেন নেইমার। যে কারণে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কার্যত থমকে গেছে। এ অবস্থায় ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ কার্লো আনচেলত্তি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নেইমার বিশ্বকাপে খেলবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পুরোপুরি তার শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লো’কিপ’-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ৬৬ বছর বয়সী আনচেলত্তি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘নেইমার যদি পুরোপুরি ফিট না হন, তাহলে তাকে ২০২৬ বিশ্বকাপ দলে নেয়া হবে না। আনচেলত্তির মতে, নেইমারকে খেলাতে হলে তাঁকে ১০০ শতাংশ ফিট হতে হবে, ৮০ শতাংশ নয়।’
সে জন্য নেইমারের করণীয় কি হবে, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন এই ইতালিয়ান কিংবদন্তি কোচ, ‘নেইমারের লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী জুনে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়া। এ বছরের অক্টোবর, নভেম্বর বা আগামী মার্চে দলে থাকা না-থাকা তার জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
নেইমার বর্তমানে খেলছেন তার শৈশবের ক্লাব সান্তোসে। সৌদি আরবে খারাপ সময় কাটিয়ে ফিরেই তিনি টানা আটটি ম্যাচ খেলেছেন এবং প্রতিটি ম্যাচই পুরো ৯০ মিনিট খেলেছেন। ক্লাবের মেডিকেল টিম বলছে, নেইমার পুরোপুরি ফিট এবং তার ফিটনেস নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সান্তোসের চিকিৎসক রদ্রিগো জোগাইব জানিয়েছেন, ভাস্কো দা গামার বিপক্ষে ম্যাচে হালকা ইনজুরি ছিল, তবে এরপরও নেইমার ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে পুরো ম্যাচ খেলেছেন। তবে ক্লাবের এসব ফিটনেস রিপোর্টকে ঠিক একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না আনচেলত্তি, বিশ্বকাপের সময় শতভাগ ফিট নেইমারকে চান তিনি।
আনচেলত্তি বলছেন, ‘নেইমার নিঃসন্দেহে ব্রাজিলের সবচেয়ে মেধাবী খেলোয়াড়। কিন্তু শুধু মেধা থাকলেই হবে না, তাকে পুরোপুরি ফিটও থাকতে হবে। ওকে আমরা পরীক্ষা করছি না, কারণ সবাই জানে ওর কী সামর্থ্য। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, নেইমার যেন ২০২৬ সালের জুনে বিশ্বকাপের সময় পুরোপুরি ফিট থাকে।’
গত বছর অক্টোবরে উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে গুরুতর হাঁটুর ইনজুরির পর থেকে জাতীয় দলের বাইরে আছেন নেইমার। এদিকে, দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলেও বাছাই পর্বেও ভালো করতে পারেনি ব্রাজিল। শেষ ম্যাচে বলিভিয়ার কাছে হেরে পেয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে কম পয়েন্ট।
এই পরিস্থিতিতে আনচেলত্তি দলের তারকাদের কাছ থেকে শৃঙ্খলা ও ফিটনেস, দুটোই চাচ্ছেন। নেইমার দলে ফিরতে চাইলে তাকেও এই শর্ত মানতেই হবে। শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন, কোচের চাওয়া পূরণ করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।