দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দ্রুত গতি আনতে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল অনেক দূর এগিয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০২১ সালে কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্লট বুঝিয়ে না দেওয়ায় এখনো কাজ শেষ হয়নি। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। চতুর্থবার প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সংস্থাটি বেশ কয়েটি কারণ উল্লেখ করেছে।
এর মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক প্লট বুঝিয়ে দিতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। পরে প্রকল্প মেয়াদ তিনবার বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে করোনাকালীন সময়ে অর্থছাড় কিছুটা কম থাকায় প্রকল্পের শুরুতে দুই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য কাজ করা সম্ভব হয়নি। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব করে।
আইবাসের নতুন নিয়মকেও প্রকল্পে মেয়াদ বাড়ানোর অন্যতম কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনলাইনে আইবাসের মাধ্যমে সিডি-ভ্যাট পরিশোধের নতুন নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধে জটিলতা নিরসনে বিলম্বজনিত কারণে প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অর্থ বিভাগে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে জানিয়েছে, এ প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা যাবে না। প্রস্তাবিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।
এছাড়া আইএমইডি প্লট না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছে, ভবন নির্মাণের জন্য প্লট বুঝে পেতে বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ বিলম্ব হয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বিষয়টি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখতে পারে।
আইএমইডি বলছে, টেলিকম ভবন নির্মাণের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়টি স্পষ্টীকরণ করতে হবে।
২০১৬ সালে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল নামে এই শিল্পনগরের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে জমি বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিলে আবেদন নেওয়া শুরু করে বেজা। পরে ২০১৮ সালে এটির নাম পাল্টে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’রাখা হয়।
জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি আবার ১২টি পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত। সেখানে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক (বিজিএমইএ) শিল্পপার্ক, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল, এসবিজি (শিকদার, বসুন্ধরা ও গ্যাসমেন গ্রুপ) অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো আলাদা জোন রয়েছে।
বেজা জানিয়েছে, পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চলটি (এনএসইজেড) চালু হলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে সেখানে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলটি থেকে প্রতিবছর রপ্তানি আয় হবে এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
সম্প্রতি দেশের আরো কিছু প্রতিষ্ঠান ও সেবার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানেও বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ নাম। সম্প্রতি গাজীপুরের কবিরপুরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ফিল্ম সিটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’ নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’করা হয়েছে।